ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর থেকে গণসংযোগ ও নিজেদের নির্বাচনী কোন্দলে ১০ জন নিহত হয়েছে। এরপর নির্বাচনরে দিন ও পরে সহিংসতায় ১১ জন নিহত হন। এরপরও সাংবাদিকদের সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কিছু সহিংসতা হলেও ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। সিইসি’র এই ধরনের বক্তব্যে ব্যাপক সমালোচনা করেছেন রাজনীতিবিদসহ মিডিয়া। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রায় সকল সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়া সম্পাদকীয়তে ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করে। সবাই বলেছে, ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানীর দায় ইসিকে নিতে হবে। কোন কোন সংবাদপত্র বলেছে, ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। ইউপি নির্বাচনের মাধ্যমে পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মিডিয়া- ভারতের হিন্দুস্থান টাইমস, দ্যা হিন্দু, দ্যা স্টার অনলাইন মালয়শিয়া, স্পটুনিক, যুক্তরাষ্ট্রের আইভি টাইমস, চীনের ছিনহুয়া অনলাইন, জার্মানির ডয়েসে ভেল, সৌদি আরবের আরব নিউজ, সৌদি গেজেট, যুক্তরাষ্ট্রের ইহাহু ৭ নিউজ, ভিয়েনার ভিনার নিউজ, দ্যা সান ডেইলি, টাইমস লাইভ পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে।
এসব মিডিয়া ২২ মার্চ বাংলাদেশে স্থানীয় নির্বাচনে সংিসতায় ও নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১১ জন নিহতের খবর ফলাও করে প্রচার করছে। নিহতের খবর উদ্বেগজনক।
ভোট কেন্দ্র দখল, গুলি, সহিংসতা, প্রাণহানি আর জাল ভোটের মহোৎসবের মধ্য দিয়ে প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর গণঅনাস্থা বলে আখ্যায়িত করেছেন রাজনৈতিক নেতারা।
বিএনপি নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, এটা নির্বাচন নয়, এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আচরণ। আওয়ামী লীগের এখন মূল বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, আমার ভোট আমি দেব, তোমার ভোটও আমি দেব।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা বাবুগঞ্জের তিন ইউনিয়নেই পুরো দখলের নির্বাচন হয়েছে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি।
নির্বাচনী ফলাফলে ৯৫ শতাংশের বেশি ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে আগে মারা যায় ১১ জন। সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মূলত ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সাথে।
কারণ বিরোধী দলের প্রার্থীরা ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশের আক্রমণের ভয়ে আগেই এলাকাছাড়া হয়েছিলেন। তারপরও বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছে শতাধিক পুলিশ।
বাংলাদেশের যেকোনো নির্বাচন যে এমন সহিংসতাপূর্ণ হয়ে উঠবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। কারণ দেশের নির্বাচন কমিশন কার্যত অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। ব্যালট পেপার ছাপানো ও কেন্দ্রে পাঠানো ছাড়া নির্বাচন কমিশনের আর কোনো দায়িত্ব নেই।
বাকি দায়িত্ব পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের। কিন্তু তারা নির্বাচন কমিশনের আওতায় থেকে দায়িত্ব পালন করছেন তা বোঝার কোনো উপায় নেই। অবশ্য নির্বাচন কমিশনও তাদের আওতায় রাখার চেষ্টা করেনি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীর সাথে পুলিশ প্রশাসনের আঁতাতের মধ্য দিয়ে তারা বিজয়ী হয়েছে।
আর যেসব স্থানে শক্ত বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন সেখানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। দিন শেষে নির্বাচন কমিশন যথারীতি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়ে দিয়েছেন। আর সহিংসতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে পুলিশের ব্যর্থতা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ যে নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশনের অধীন থাকে তা ভুলে যাওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে বর্তমান নির্বাচন কমিশন যে সীমাহীন ব্যর্থতা, অযোগ্যতা ও ক্ষেত্রবিশেষে সাংবিধানিক পদের অমর্যাদা করেছে, তা ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে। ৫ জানুয়ারি জবরদস্তিমূলক ভোটারবিহীন একটি নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীন দলের অনুগত একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছিল। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে তাদের সুযোগ এসেছিল স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের।
কিন্তু মেরুদ-হীন নির্বাচন কমিশন প্রতিটি নির্বাচনে তাদের অযোগ্যতার প্রমাণ রেখেছে। মূলত ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থরক্ষা তাদের দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করেছে। এর ফলে জনপ্রতিনিধি বাছাই নয়, নির্বাচন এখন ক্ষমতাসীন দলের ভেতরে একটি রক্তারক্তি লড়াইয়ের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। নির্বাচনের নামে এই সহিংসতা ও প্রাণহানির জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনারদের উচিত এ ধরনের কলঙ্কিত নির্বাচনের দায় যেন আর তারা না নেন। আত্মমর্যাদা নিয়ে তাদের সরে দাঁড়ানো উচিত।
পাঠকের মতামত: